প্রেমের টানে পাবনায় মালয়েশিয়ান তরুণী

0 ১৪৪
পাবনা প্রতিনিধি : পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে সাত বছর আগে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবাড়িয়া গ্রামের নতুনপাড়ার আব্দুস সামাদ মন্ডলের ছোট ছেলে রায়হান মন্ডল।
কয়েক বছর পর সেখানে মালয়েশিয়ান এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই তরুণীকে নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে বাড়িতে ফিরেছেন রায়হান। তাদের দেখতে বাড়িতে ভিড় করছে এলাকাবাসী।
মালয়েশিয়ান ওই তরুণীর নাম নূর সাহিদা। তিনি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরের মোহাম্মদ চিমার উদ্দিনের মেয়ে।
রোববার (১৬ জুলাই) সকালে এক মাসের ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে পাবনায় এসেছেন রায়হান ও সাহিদা। সোমবার (১৭ জুলাই) বাড়িতে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে ৮ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৬ সালের দিকে মালয়েশিয়ায় যান রায়হান মন্ডল। সেখানে একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি সেখানে একটি নিজস্ব কাপড়ের দোকান দেন।
সেখানে মালয়েশিয়ান তরুণী নূর সাহিদার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছয় মাস আগে সেখানে তারা বিয়ে করেন। এরপর এক মাসের ছুটি নিয়ে পাবনার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রোববার সকালে প্রথমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন।
সেখান থেকে পাবনার বাড়িতে আসেন। এরপর সোমবার বিকেলে স্থানীয় কাজির মাধ্যমে এক লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে পড়ানো হয়।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মালয়েশিয়ান তরুণী এলাকায় আসার খবরে রায়হানের বাড়িতে ভিড় করেছেন স্থানীয়রা। নবদম্পতিকে অভিনন্দন জানাতে আসছেন পাড়া-প্রতিবেশীরা।
সবুজ হোসেন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, মালয়েশিয়ান মেয়ে বলে কথা, তাও আবার আমাদের এলাকার এক যুবকের সঙ্গে প্রেম করে চলে আসছেন। তাদের একনজর দেখতে শতশত মানুষ বাড়িতে ভিড় করছে। এজন্য আমরাও দেখতে আসছি।
সুজানগর শহর থেকে আসা আজিবর নামে এক যুবক বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু অটোরিকশা ভাড়া করে এদের দুজনকে দেখতে আসছি। খুবই ভালো লাগছে।
মালয়েশিয়া প্রবাসী রায়হান মন্ডল বলেন, ৭ বছর আগে আমি পড়াশোনা ছেড়ে পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে মালয়েশিয়াতে কাজের জন্য যাই। সেখানে কয়েক বছর পর পরিচয় হয় মালয়েশিয়ান তরুণী নুর সাহিদার সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম-ভালোবাসা। আমাদের দীর্ঘ প্রায় তিন বছরের সম্পর্ক।
সে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশে আসার পর গত সোমবার আমার গ্রামের বাড়ি পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়ার তারাবাড়িয়া
নতুনপাড়ায় দুই পরিবারের সম্মতিতে এক লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। এক মাস পর আমরা দুজনই আবার মালুয়েশিয়ায় ফিরে যাব। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমরা যেন আজীবন সুখে থাকতে পারি।
মালয়েশিয়ান তরুণী নূর সাহিদা বলেন, রায়হান আমাকে ভালোবাসে, আমিও রায়হানকে ভালোবাসি। পরিবারের সবার সম্মতিতে আমরা বিয়ে করেছি। আল্লাহ আমাদের এ বিয়ে কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশে আসার পরে দেখি এখানকর মানুষ খুব ভালো। আশা করি এই বাড়ির মানুষও দারুণ হবে।
রায়হানের বোন চম্পা খাতুন বলেন, ১০ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রায়হান। ছোটবেলা থেকে তাকে আদর যত্ন করে মানুষ করেছি। বিদেশে গিয়ে সেখানকার একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। এটা আমাদের কাছে ভালো লাগছে। আমরা সবাই মিলে আনন্দ করছি।
রায়হানের মা অলিমা খাতুন বলেন, মালয়েশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করায় খুব খুশি হয়েছি। যেহেতু মেয়েটি পারিবারিকভাবে সম্ভ্রান্ত মুসলিম বংশের মেয়ে সেজন্য আরও ভালো লাগছে। ৬ মাস আগে নাকি সেখানে বিয়ে করেছে তারা। আমাদের বাড়িতে আসার পর ধুমধাম করে পুনরায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবার সঙ্গে মিশে গেছে মেয়েটি। আমরা যা খাচ্ছি সেও তাই খাচ্ছে।  আমাদের বাড়িতে অনেক মানুষ আসছে। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাগছে।
এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, লোকমুখে শুনেছি মালয়েশিয়া থেকে এক তরুণী এসে আমাদের উপজেলার সাতবাড়িয়াতে একজন যুবকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.