বন্ধু খোকার রক্তে রাঙানো বাংলাদেশ! : টুকুর ফেসবুক স্ট্যাটাস
বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম : স্বাধীনতা যুদ্ধের রণাঙ্গনের যোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টার হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
রাজধানী ঢাকার রাজনীতির এই প্রভাবশালী নেতার অসুস্থতার খবরে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পথচলার সঙ্গী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ‘বন্ধু খোকার রক্তে রাঙানো বাংলাদেশ!’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি-এর পাঠকের জন্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“২০১৯ সাল… আমার জীবন চলার পথে হাতেগোনা যে কয়েকজন বন্ধু ছিল, তাদের জীবনপ্রদীপ নেভার মিছিলে ছিল মাহফুজ, জাহাঙ্গীর, সাহান। গত রাত ২.৩০টার সময় আমেরিকা থেকে ফোন আসল, ভয়ে ভয়ে ফোন ধরলাম। যে ভয় পেয়েছিলাম সেটাই ঘটল – ‘বন্ধু খোকা’, সাদেক হোসেন, ঢাকার সাবেক মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা এর খবর। বেশ কয়েক বছর হল মরন ব্যাধি ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। গতমাসে দেখা করে আসলাম সাংবাদিক মনির হায়দারকে সাথে নিয়ে।
দুপুরে লাঞ্চ করলাম নামি পুরানো এক রেঁস্তোরায়। বন্ধু আমার ভাল খেতে পারল না । ওর মত বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমার নিউইয়র্ক পৌঁছাতে রাত একটা বেজে গেল।অসুস্থ বন্ধু আমাকে পিক করার ও হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করল । আমার হোটেল রুমে যাওয়া নিশ্চিত করেই তবে সে ঘুমোতে গিয়েছিল। দুইটা দিন আনন্দে কেটে গেল।ব্রেকিংনিউজ
ফোনে খবর এল ডাক্তার জানিয়েছে বন্ধু আর মাত্র কয়েক দিনের পথিক । সারারাত ঘুম হল না। কত স্মৃতি… ৬০’র দশকে রাজপথ কাঁপানো মিছিল। স্টেডিয়ামে খেলা দেখার পর গোপীবাগের মোড়ে সাবুর সাথে লুচি-সবজী খাওয়া। তারপর মুক্তিযুদ্ধের কত কথা ।
মৃত্যুপথ যাত্রী বন্ধুর সাথে কথা হল। একটা কথা যতদিন বাঁচব কানে ভাসবে- ‘দোস্ত চলে যাচ্ছি, ডাক্তার জবাব দিছে। কষ্ট একটা বুকে… মৃত্যু জয় করে যে দেশ স্বাধীন করলাম, আজ সেই দেশের মাটিতে আমার কবর হবে না?’
জবাব দিতে পারিনি, বুকের মাঝে রক্ত ঝরছে। এই আজকের বাংলাদেশ!”
সাদেক হোসেন খোকার রাজনৈতিক জীবন
বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আশির দশকে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন খোকা। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব খোকাকে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হলেও তা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। এতে খোকা পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন থেকে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন।
পরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর আগে ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের কাছে পরাজিত হন মির্জা আব্বাস।
বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। পাশাপাশি খোকাকে সভাপতি ও আবদুস সালামকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। নতুন করে কমিটি গঠনের জন্য আবার ২০১১ সালে সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এই কমিটির বিরুদ্ধেও খোকার প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসের অনুসারীরা নানা অভিযোগ তোলেন।
অভিযোগ আছে ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দলে যে সংস্কারের দাবি উঠেছিল তার প্রতি সাদেক হোসেন খোকার সমর্থন ছিল। যদিও বিএনপির রাজনীতিতে পরবর্তী সময়ে এর কোনো প্রভাব তার ওপর পরিলক্ষীত হয়নি।