ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক কতটা উপকারী?

0 ৪৮৭

স্বাস্থ্য ডেস্ক: প্রতিনিয়তই বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। বিশেষত বায়ুদূষণে নাভিঃশ্বাস উঠেছে মানুষের। আর এই বায়ুদূষণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এর সঙ্গে এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভাইরাস সংক্রমণ। চলমান করোনা ভাইরাস আতঙ্ক এখন বিশ্বের দেশে। বাংলাদেশও রয়েছে ঝুঁকিতে।

এসব সংক্রমণ ঠেকাতে এখন দারুণ এক প্রতীকী ছবি হচ্ছে মাস্ক ও মুখোশ পরা। এরইমধ্যে বাংলাদেশেও বেড়েছে মাস্কের জনপ্রিয়তা। আর করোনা ভাইরাসের উৎসস্থল চীনে তো এখন দিনরাত মানুষ মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রাখে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের সংশয় আছে, বায়ুবাহিত ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে। তবে হাত থেকে মুখে সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে মাস্কের সুফল স্বীকার করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯১৯ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারিতে প্রায় ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সেই থেকেই সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যবহার শুরু হয়।

মাস্কের কার্যকারিতা সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে সেন্ট জর্জেসের ড. ডেভিড ক্যারিংটন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানান, বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ঠেকাতে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক যথেষ্ট নয়। কারণ এই মাস্কগুলো এতটাই ঢিলেঢালা থাকে যে তাতে ঠিকভাবে বাতাস ফিল্টার হয় না। পাশাপাশি এই মাস্ক ব্যবহার করলেও ব্যবহারকারীর চোখ তো উন্মুক্তই থাকে।’

তিনি মনে করেন, এইসব মাস্ক হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে সাহায্য করে। হাত থেকে মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধেও সামান্য সুরক্ষা দেয়।

এ বিষয়ে ২০১৬ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, মানুষ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে অন্তত ২৩ বার হাত দিয়ে মুখ স্পষ্ট করে।

ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মলিক্যুলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল বলেছেন, তারা একটি সমীক্ষায় দেখেছেন, রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক ইনফ্লুয়েঞ্জা ঠেকাতে সাহায্য করে।

রেসপিরেট এমন এক ধরনের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র যাতে থাকে একটি বিশেষায়িত ফিল্টার। বায়ুবাহিত ক্ষতিকর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পদার্থের হাত থেকে শ্বাসনালীকে সুরক্ষা দিতেই তৈরি করা হয়ে এসব রেসপিরেটর।

এ ব্যাপারে কুইন্স ইউনিভার্সিটি অব বেলফাস্টের ওয়েলকাম-উল্ফসন ইনস্টিটিউট ফর এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের ড. কনর বামফোর্ড বলেন, মাস্কের চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তাতে ছোঁয়াচে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ড. কনর মনে করেন, হাঁচি দেয়ার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা দরকার, তারপর হাত ধুয়ে নেয়া। হাত ধোয়ার আগ পর্যন্ত সেই হাত দিয়ে মুখে স্পষ্ট না করা। তাতেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে ছড়ানো ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটা কম থাকবে।

মাস্ক ব্যবহারের চেয়েও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড-এর ড. জেক ডানিং।

তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন মাস্ক ব্যবহার খুব উপকারী। কিন্তু হাসপাতালের বাইরে এই মাস্ক ব্যবহারে খুব বেশি উপকার পাওয়ার নজির কমই আছে। আর মাস্ক যদি পরতেই হয় এবং সেটা থেকে যদি উপকার পেতেই হয় তবে সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক পরতে হবে। সেক্ষেত্রে নিয়মিত মাস্কটি বদলাতে হবে। ব্যবহৃত মাস্ক যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। মানতে হবে নিরাপত্তা নির্দেশিকাও।

Leave A Reply

Your email address will not be published.