অন্ধ ভিক্ষুকের উত্তর মুগ্ধ করেছিল এন্ড্রু কিশোরকে

0 ৩৭৪

বরেণ্য সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর এই ধরাধামে নেই, অনুরাগীদের মনে তা আজও বিস্ময় হলেও সত্যিই তাঁর শারীরিক উপস্থিতি নেই এক বছর হলো। এ বড় দুঃখের দিন!

এমন দিনে তাঁর সংগীতজীবনের স্বার্থক দুটি গল্পের কথা শোনা যাক। যে দুই ঘটনা ছাড়া গানের কোনও ফিডব্যাক কাউন্ট করেননি এই সংগীত তারকা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সেই গল্প শুনিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর।

এন্ড্রু কিশোরের ভাষ্যমতে গল্পটা এমন, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে গাওয়ার অনেক পরের ঘটনা। বন্ধুদের মধ্যে প্রথম বিয়ে হচ্ছে, তাই সবাই বিয়েতে গিয়েছি, গহীন গ্রামে। বন্ধু গরুর গাড়িতে যাচ্ছে, আমরা গাড়ির পাশে হেঁটে হেঁটে মজা করতে করতে যাচ্ছি। দেখি, পানিতে মহিষ ডুবে আছে, পিঠে একটি বাচ্চা ছেলে, গায়ে এক টুকরো পোশাকও নেই। সে জোরে জোরে গাইছে ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে… বাড়ি ফিরে মাকে বললাম, মা, আমার গান গাওয়া সার্থক। এ জীবনে আর গাইতে না পারলেও কিছু হবে না। কারণ, ওই ছেলেটির তো গানের সেন্সই তৈরি হয়নি। গণ্ডগ্রামে, একেবারে উলঙ্গ ছেলে আমার গান মনে রেখেছে, গানটি তার ভালো লেগেছে—এটাই আমার সংগীতজীবনের পরম প্রাপ্তি।’

প্রয়াত বরেণ্য সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ছবি : সংগৃহীত

তুমুল জনপ্রিয় এই গান নিয়ে আরও একটি গল্পে এন্ড্রু কিশোর জানিয়েছিলেন, ‘ছবির নাম ছিল প্রাণসজনী। ১৯৮২-৮৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল। এই গান নিয়ে আরেকটি ঘটনা আছে। আমার এক সাংবাদিক বন্ধু আমেরিকায় থাকে, ভারতে বেড়াতে গেছে। বোধহয় দিল্লি থেকে কলকাতার ট্রেনে উঠেছে। এক অন্ধ ভিক্ষুক ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে গাইতে গাইতে ট্রেনে ভিক্ষা করছে। সে ও তার স্ত্রী অবাক হয়ে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, যে গানটি গেয়েছ, সেটি কার গাওয়া গান জানো? সে বলল, বাংলাদেশের শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের। কোথায় শিখেছ?, রেডিওতে।’

১৯৫৫ সালে এন্ড্রু কিশোরের জন্ম রাজশাহীতে। সেখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।

বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ হিসেবেও পরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাঁকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। কয়েক দশক ধরে সেই সমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছেন শ্রোতারা। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে তাঁর।

Leave A Reply

Your email address will not be published.