বগুড়ায় সমতল ভূমিতে সফল হয়েছে কাজু বাদামের চাষ

0 ৯০

বগুড়া প্রতিনিধি: গাছে গাছে এক সাথে ফুল, ফল ঝুলছে। প্রতিদিন অনেকে আসছেন কাজু বাদামের গাছ ও তার ফল দেখতে। পাহাড়ী অঞ্চলের কাজু বাদাম পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফল হওয়ায় ব্যাপক সম্ভাবনাময় বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। আগামীতে এই ফসলটিও হতে পারে উপজেলার অন্যতম লাভজনক চাষ।

কিছুদিন আগেও যে কাজু বাদাম ছিলো অভিজাত মানুষদের জন্য বিদেশ থেকে আনা নাস্তার উপকরণ, সেই কাজু বাদাম এখন বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা ছাড়াও চাষ হচ্ছে বগুড়ার সমতল ভূমিতে। পুষ্টি গুণাগুণের বিবেচনায় এ সুপার ফুড  চাষ করে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে কৃষি অফিসসহ এই চাষের উদ্যাক্তার।

উপজেলার খোট্টাপাড়া গ্রামের মোহতাসিম বিল্লাহ রেজা ঢাকা কলেজ থেকে বিএসএস করে এসেনসিয়াল ড্রাগস-এ কিছুদিন চাকরি করেছেন। তারপর চলে যার  সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে ফিরে এসে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন। এরপর বাবার জমিতে শুরু করেন চাষাবাদ। তার ঝোঁক ছিল  তিনি বিভিন্ন ফলের বাগান করবেন।

কৃষি অফিসের পরামর্শে ধান আবাদের পাশপাশি তিনি নিজের জমিতে মাল্টার বাগান গড়ে তোলেন। পাশপাশি তিনি কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৫০ শতক জমিতে ৮০টি কাজু বাদাম গাছ রোপন করেন। এই চারা রোপনের পর স্থানীয়রা অনেকে তাকে অনেকভাবে বিদ্রপ করেছেন। বলেছেন এটা পাহাড়ের ফসল।

এখানে কখনই এর ফল দেখতে পাওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে লোকের কথা গায়ে লাগত। কিন্তু শাজাহানপুর উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আখতার রওজেয়ারা রোজী সব সময় তাকে সাহস ও সহযোগিতা করেছেন। ১৮ মাস পরে তার ৪০টি গাছে ঝুলছে কাজু বাদাম। গত পাঁচ বছর হলো মাল্টা বাজারজাত করেছেন। ফলন এবং সাইজে ছোট হওয়ায় এবছর মাল্টা গাছ কেটে ফেলেছেন।

মোতাসিম বিল্লাহ রেজা বলেন, ১৮ মাস আগে উপজেলা কৃষি অফিস পরীক্ষামূলকভাবে তাকে বিনামূল্যে ৮০ টা কাজুবাদামের গাছ দেয়। বর্তমানে তার ক্ষেতে ৬০টি কাজুবাদাম গাছ রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩০টি গাছেই ফুল ও ফল এসেছে। এর মধ্যে কয়েকটি গাছে ফল এসেছে যা ৪ থেকে ৫ কেজি বাদাম হবে বলে আশা করছেন তিনি।

কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক কিভাবে প্রক্রিয়াজাত করা যায় তা শিখে নিয়েছেন। খুব শিগগিরই তিনি এই সুপার ফুড বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন বলে মনে করেন। তিনি নতুন উদ্যাক্তাদের উদ্দেশে বলেন বাংলাদেশের মাটি আসলে সোনার মত। এখানে যা ফলাবেন তাই ফলবে। শুধুমাত্র উদ্যোগের প্রয়োজন। এখন সময় এসেছে বাণিজ্যিকভাবে কাজু বাদামের মত অপ্রচলিত খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করার।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কর্মকর্তা আখতার রওজেয়ারা রোজী জানান, কাজুবাদাম মূলত পাহাড়ী ফসল। কাজুবাদাম ও কফি চাষ’ গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার খোট্টাপাড়া ব্লকের মোতাসিম বিল্লাহকে ২০২১ সালে ৮০টি চারা দেয়া হয়। এরমধ্যে ২০টি চারা নষ্ট হয়ে যায়। গাছগুলোতে এবছর ফুল-ফল দু-ই এসেছে। কাজু বাদাম ও এর উপরের কাজু আপেল বেশ সুস্বাদু ফল । দুটোই খাওয়া যায়। এটি বেশ লাভজনক ফসল।

তিনি আরও বলেন কাজু বাদাম গন্ধ ও স্বাদে মিষ্টি-জাতীয়। ওজন হ্রাস, রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর হৃদয় গঠন, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধ, ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় এটি এক দারুণ পুষ্টিকর খাবার। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হলে এটি স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে রফতানি করা যেতে পারে বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

বগুড়া কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মতলুবর রহমান  জানান, সমতলভূমিতে কাজুবাদাম ও কফি গবেষনা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কাজুবাদাম চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। যে কারণে সরকারিভাবে এখন ব্যাপক ভিত্তিতে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকদের কাজুবাদাম চাষে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।

যদিও এসব অপ্রচলিত বিদেশি ফল চাষের জন্য কৃষিবিভাগ সবসময় গবেষণা করে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন দেশের কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে।

এ জন্যই সরকারিভাবে এ নির্দিষ্ট জায়গায় নিদৃষ্ট কৃষককে বিনামূল্যে চারা দেয়া হয়েছে, প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, উৎসাহিত করা হচ্ছে।  তিনি আরও বলেন, কৃষিতে সম্ভাবনাময় ও অর্থকরী ফসল কাজু বাদাম। বাংলাদেশে কাজু বাদামের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীতে এই ফসলটি হতে পারে দেশের অন্যতম রফতানি পণ্য।

Leave A Reply

Your email address will not be published.