রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনে শীর্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ

0 ৮৭

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: আম উৎপাদনে শীর্ষে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমের রাজধানী হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। এ জেলার সুস্বাদু আম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। তবে বিদেশে এ আমের কদর থাকলেও, আসেনি কাঙ্খিত সাফল্য। বিদেশে নিরাপদ আম রফতানি করতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’।

চলতি বছরে চালু হওয়া এই প্রকল্পটির মাধ্যমে বিদেশে আম রফতানিতে আশা দেখছে আম চাষিরা। অন্যান্য বছর নিজ উদ্যোগে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন করলেও, সেই আম বিদেশে পাঠাতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েছিলেন আম চাষিরা। তবে এবার সরকারি প্রকল্প থাকায় আম রফতানির নিশ্চয়তা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

বর্তমানে এ জেলার আম সুমিষ্ট হলেও রফতানিতে তেমন সাড়া পড়েনি। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আমের চাহিদা থাকলেও আইন কানুনের বেড়াজালে আম চাষিরা বিদেশে রফতানি করতে পারছেন না। আমের উৎপাদন বেশি হলেও, কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে হতাশায় ভুগে আম চাষিরা। এতে অনেকে আমের গাছ কেটে ফেলছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, এবার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ নিয়ে কম বালাইনাশক কম স্প্রে করে আম চাষাবাদ করছি। ভালো ফলনও হয়েছে। এই আমগুলো যদি আমরা বাইরে রফতানি করতে পারি, তাহলে কাঙ্খিত মূল্য পাওয়া যাবে। বিদেশে আম রফতানি করতে গেলে বিভিন্ন সরকারি দফতরের সাহাযের প্রয়োজন হয়, না হলে আম রফতানি করা যায় না। যেহেতু সরকারিভাবে এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে এবার বিদেশে আম পাঠাতে আর সমস্যা হবে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অ্যাসসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুঞ্জের আলম মানিক বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতর বিদেশে আম রপ্তানি করার জন্য যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে এটি অত্যন্ত ভালো পরিকল্পনা। এ প্রকল্পে আম নিয়ে কাজ করলে চাষিরা কাঙ্খিত দামে আম বিক্রি করতে পারবেন।

সম্প্রতি সময়ে জেলার নাচোল উপজেলা থেকে বদরুদ্দোজা নামে এক বাগানি ইংল্যান্ড ও সুইডেনে এক হাজার ৪০০ কেজি আম রফতানি করেছেন। তিনি রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় না থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ থেকে তাকে সব ধরণের সহায়তা করেছে।

নাচোলের রফিকুল ইসলাম নামে এক আম বাগানি রফতনিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। তিনি খুব শিগগিরই বিদেশে তার বাগানের নাবি জাতের আম্রাপালি আম রফতানি করবেন বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, চলতি বছরই রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১ জন আম চাষি রয়েছে। এদের সবাইকে একটি করে প্রদর্শনীসহ প্রশিক্ষণ, সার, কিটনাশক, বালাইনাশক ফ্রুট ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা বিদেশে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন করে বিদেশের মার্কেটে পাঠাতে পারবেন। এমনকি রফতানিকারকদের আকৃষ্ট করতে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলো থেকে এবার সব চেয়ে বেশি রফতানিকারক এখানে এসেছে এ জেলায়।

তিনি আরও বলেন, আশা করছি এবার বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি আম রফতানি করতে পারবেন চাষিরা। আমাদের নির্ধারিত আম বাগানগুলো নিয়মিত মনিটরিং করছে। এই সব আম রফতানির নিশ্চয়তা রয়েছে। উৎপাদন ও চাহিদার ভেতরে একটি সম্পর্ক রয়েছে অর্থনীতির ভাষায়। উৎপাদন বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বাড়তে হবে। তখনই কাঙ্খিত দাম পাওয়া যাবে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০১ জন চাষি এই প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ ও রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন করছেন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৪১ জন, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৬৪ জন, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৩২ জন, নাচোল উপজেলায় ৩৫ জন এবং ভোলাহাট উপজেলায় এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ২৯ জন চাষি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.