বগুড়ার শেরপুরে নামজারি ও ভূমি উন্নয়নে রাজস্ব আদায় প্রায় ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা

0 ৬৬

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: “এক সময় ভূমিসেবা নিতে গিয়ে মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ ছিলনা। হয়রানি ও ভোগান্তি বন্ধে ভূমিসেবা ডিজিটালাইজড করেছে সরকার।” তাইতো ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে ভূমি বিষয়ক নানা সেবা ও তথ্য। শুধু সেবাই নয়, কোন প্রকার হয়রানি ছাড়াই শতভাগ ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হচ্ছে অনলাইনে। ই-নামজারি, করণিক ভুল সংশোধন, সূচি সংশোধন, মিসকেস নিষ্পত্তি সবই এখন অতীতের তুলনায় সময় কমে এসেছে।

এ ছাড়া নামজারির গড় নিষ্পত্তির সময়সীমা কমে এসেছে এসেছে পনের থেকে বিশ দিনে। এতে করে ভোগান্তি ও হয়রানির পাশাপাশি দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমেছে। তবে আর স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই নামজারি বা মিসকেস নিষ্পত্তির ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে বলে দাবী করেন উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভূমি) এসএম রেজাউল করিম।

উপজেলা ভূমি অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শেরপুর উপজেলার পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৫,২৫০টি নামজারি(মিউটেশন /মিসকেস) নিস্পত্তি হয়েছে এবং এসব থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬, লক্ষ ৪২ হাজার ৫০০টাকা। এরমধ্যে পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন থেকে ভূমি উনয়ন কর বাবদ অনলাইনে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি, ৩৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩০৪ টাকা। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে গত বছর ও বকেয়া ১ কোটি ৩০ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৭১ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়।

সেক্ষেত্রে সাধারণ দাবি থেকে ১ কোটি ৩২ লক্ষ ১৫ হাজার ৯৩৬ এবং বিভিন্ন সংস্থার দাবি থেকে ৬ লক্ষ ২১ হাজার ৩৬৮ টাকা আদায় হয়েছে। যাহা গড়ে শতকরা ৯৬ থেকে ১০৬ ভাগ। এছাড়াও উপজেলার ৪৩টি সরকারি পুকুর(জলমহাল) থেকে ভ্যাট ও আয়কর সহ রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ লক্ষ ৫১ হাজার ৩০৬ টাকা। সবমিলিয়ে শেরপুর উপজেলা ভূমি অফিস গত অর্থ বছর(২০২২-২০২৩) ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১ কোটি টাকা ৬৩ লক্ষ ৩১ হাজার ১১০ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে।

শেরপুর পৌর শহরের স্যানালপাড়ার কমল চন্দ্র পালের মেয়ে মিতা রানী পাল বলেন, আমার ১ শতাংশ জমির নামজারি করতে অনলাইনে আবেদন করি। পরদিনই নামজারি কেসের নম্বর আমার মোবাইলে ম্যাসেজ পাইছি।
একইভাবে উপজেলা ভবানীপুর ইউনিয়নের চকরাজীব গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, তার নিজনামে ১৮ শতাংশ জমির নামজারি ও খাজনা প্রদানের জন্য অনলাইনে আবেদন করি। এক সময় ভূমি অফিসগুলোতে অনেক হয়রানি ও দালালদের খপ্পরে পড়তে হতো বলে জেনে এসেছি। তবে এখন কোন প্রকার হয়রানি ও দালালী ছাড়াই এভাবে আমার নামজারির কাজ সম্পন্ন হবে ভাবতেও পারিনি।

অনলাইনে ডিসিআর ফি জমা দিতে আসা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের তালতা গ্রামের মজিবর রহমানের মেয়ে মাকসুদা পারভীন নামের এক নারী বলেন, উপজেলা মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ১৩ শতাংশ জমির নামজারির আবেদন করি। আবেদনের ২২ দিনের মাথায় আমার ফোনে নামজারি মঞ্জুর ও ডিসিআর ফি জমা দেওয়ার বার্তা আসে। দ্রুত সময়ে কোনো প্রকার তদবির ও ঘুষবিহীন এমন সেবা পেয়ে আমি অবাক হয়েছি। ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রেজাউল করিম জানান, ডিজিটাল ভূমি উন্নয়ন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অনলাইন পদ্ধতিতে সেবা প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহক হয়রানি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণ কম সময়ে সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে এবং সরকারেরও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছ।

তিনি আরও বলেন, আমি আসার পর প্রায় ৫ হাজারের অধিক নামজারি নিষ্পত্তি করে দিয়েছি। একজন সাধারণ মানুষ যখন ভূমিসেবা নিয়ে হাসিমুখে বিদায় নেয় তখন এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে। আমি চেষ্টা করছি দিন দিন আমার কাজের গতি আরও বাড়াতে। অফিসের সহকর্মীদের গুড টিমওয়ার্কের ফলে দ্রুত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।

তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনন্য এক উদ্যোগ ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা। এর সুফল এখন গোটা দেশবাসী পাচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হওয়ায় জমিসংক্রান্ত বিরোধ কমার পাশাপাশি জমির প্রকৃত মালিকের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সহজ হয়েছে। আগামীতে ই-ভূমি রেজিস্ট্রি ও স্যাটেলাইটের সহায়তায় ভূমি জরিপ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তখন সবার ল্যান্ড উনারশীপ কার্ড থাকবে। ওই কার্ডের মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত সব তথ্য পাওয়া যাবে।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, সেবাগ্রহীতারা কোনোপ্রকার হয়রানি ছাড়াই মোবাইল ফোনে এসএমএস প্রাপ্তি, ফ্রন্ট ডেস্কে তথ্য সহায়তা ছাড়াও অনলাইনে সব আপডেট জানতে পারছেন।এতে তাদের সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে আবার ঝামেলা কিংবা জটিলতা দূর হয়েছে। ভূমিসেবা পেতে এখন এক ঠিকানায় (খঅঘউ.এঙঠ.ইউ)লগিং করা সহ সার্বক্ষণিক কল সেন্টার (১৬১২২) যোগাযোগ করা যেতে পারে।

তবে বর্তমান সরকারের এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দুর্নীতি ও ভোগান্তি এখন অনেকটাই কমেছে। এর ফলশ্রুতিকে স্বীকৃতি স্বরূপ অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস)’ পুরস্কার জিতেছে সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ ভূমি মন্ত্রণালয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.