রাজশাহীতে হত্যা মামলায় আটক ৪

0 ১১৫

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পবা থানা এলাকায় হত্যার ঘটনাকে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েও রক্ষা পেল না আসামিরা। এ ঘটনায় ৪ আসামিকে গ্রেফতার করে আরএমপি’র পবা থানা পুলিশ। আসামি সজল খুনের দায় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

আটককৃত আসামিরা হলো, রাজশাহী মহানগরীর এয়ারপোর্ট থানার পশ্চিম বাঘাটা গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে মোঃ সবুজ আলী (২৮), পবা থানার মহানন্দাখালী গ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে মোঃ কাওসার আলী (৪২), ও একই এলাকার মৃত শহিদুল্লাহ-এর ছেলে ও তার স্ত্রী সুইটি।

ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, গত ১লা জুলাই দুপুর সাড়ে ৩ টায় রাজশাহী মহানগরীর পবা থানা পুলিশ নওহাটা দুয়ারী গামী রাস্তায় মধ্যবয়সী অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেলে প্রেরণ করে। ডাক্তার পরবর্তীতে পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন ।

মরদেহের প্যান্টের পকেটে কোভিড-১৯ টিকা কার্ড পাওয়া যায়। টিকা কার্ড দেখে জানা যায়, মৃতের নাম সুলতান আলী। সে রাজশাহী জেলার বাঘা থানার আড়ানী গ্রামের নবীর আলীর ছেলে। সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় লাশের কপালের বাম পাশে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় সন্দেহ হলে পুলিশ লাশের পোস্টমর্টেম করায়।

গত ২২শে জুলাই ডাক্তারের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যায় সুলতানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এঘটনায় মৃত সুলতানের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে গত ২৪শে জুলাই পবা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।

মামলার রুজু পরবর্তীতে উপ-পুলিশ কমিশনার (শাহ্‌মখদুম) মোঃ নূর আলম সিদ্দিকীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (শাহ্‌মখদুম) এ.এইচ.এম আসাদ হোসেনের নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ শেখ মোঃ মোবারক পারভেজ, তদন্তকারী অফিসার এসআই মোঃ মোস্তাফিজার রহমান ও তার টিম মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন-সহ আসামিদের আটককের অভিযান শুরু করেন।

পরবর্তীতে পবা থানা পুলিশের ওই টিম গত ২৪শে জুলাই আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে নিজ নিজ বাড়ি থেকে আসামিদের আটক করে। আটককৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত আসামি সজল ও তার স্ত্রী সুইটির রিমান্ড মঞ্জুর করেন।পুলিশ হে

ফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে আসামি সজল আজ খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

আটককৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মৃত সুলতান ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করতো। দুই মাস পূর্বে মোবাইল ফোনে আসামি সজলের স্ত্রী সুইটির সাথে সুলতানের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সুলতান দেখার করার জন্য ড্রায়ই সুইটিকে প্রস্তাব দেয়। সুইটি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে সুলতান সুইটির তিন বছরের বাচ্চার ক্ষতি করার হুমকি দেয়।

সুইটি বিষয়টি তার স্বামী সজলকে জানালে সজল সুলতানকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক আসামি সজল তার স্ত্রী সুইটির মাধ্যমে সুলতানকে রাজশাহীতে দেখা করার জন্য আসতে বলে। গত ১জুলাই সুলতান সুইটির সাথে দেখা করার জন্য রাজশাহীতে আসে। তখন সুইটি তাকে পবা ও তানোর থানার সীমাস্তবর্তী নাইস গার্ডেনে নিয়ে যায়। নাইস গার্ডেন তারা পৌঁছার সাথে সাথে পরিকল্পনা মোতাবেক সজল, তার বন্ধু সবুজ ও চাচা আনারুলকে সাথে নিয়ে নাইস গার্ডেনে প্রবেশ করে সুলতানকে জোরপূর্বক অটোরিক্সায় করে নওহাটার দিকে নিয়ে যায়।

এসময় আসামিরা তাকে মারপিট করে এবং তার পরিবারের লোকজনদের আসার জন্য বলতে বলে। এতে সুলতান রাজি না হলে দুপুর ৩টায় পবা থানার বাগসারা বাজার পার হয়ে ফাঁকা জায়গায় অটোরিক্সার ভিতরে আসামীরা সুলতানের হাত, পা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দুর্ঘটনার নাটক সাজায়। সেই মোতাবেক তারা রাস্তায় চলন্ত ট্রাক খুঁজতে থাকে।

এসময় অপর দিক থেকে একটি ট্রাক আসতে দেখে তারা সুলতানের লাশ ট্রাকের সামনে ফেলে দেয়। ফলে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সুলতানের মাথায় যখম হলে আসামিরা পালিয়ে যায়। আশপাশের সাধারণ লোকজন ঘটনাস্থলে এসে ট্রাকের সাথে ইজি বাইকের দুর্ঘটনার কারণে সুলতান মারা গেছে বলে পবা থানা পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.