লালপুর ( নাটোর) প্রতিনিধি: লালপুরের পদ্মার চর ভরে উঠেছে সবুজ ফসলে , কৃষকের বুকভরা স্বপ্নে হাসি ফুটছে । সত্তরের দশকে লালপুরের ৩ টি ইউনিয়নের ১৮ টি মৌজা পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে কয়েক হাজার পরিবার ভুমি হীন হয়ে পড়ে । আশ্রয় নেয় সরকারি জায়গায়, সড়কের পাশে । এখন পদ্মায় জেগে ওঠা চরের জমিতে অসহায় ভুমিহীন কৃষকরা তাদের স্বপ্নের হাসি ফুটিয়ে তুলছে , চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। সবুজ ফসলে পদ্মার বালুচর বুঝে ওঠা কষ্টকর এখন।
প্রায় ১২ বর্গমাইল আয়তনের চরে চালকুমড়া , বাদাম , বেগুন , পুঁইশাক, লালশাক , কলা , পটোল, করলা, শসা , ধান ,পাট , পেয়ারা , আম , বরই সহ নানা রকমের শাক-সবজি,ফসল,ও বাগানে ভরে উঠেছে। এখন সবুজ ফসলের সমাহার।
চরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিঘা বিঘা আয়তনের চালকুমড়ার মাচান। মাচানের নিচে ঝুলছে কচি চালকুমড়া। ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। চারা রোপণের দুই মাসের মাথায় চালকুমড়া ধরতে শুরু করেছে। প্রতিটি ২০- ২৫ টাকা করে পাইকারি দামে বিক্রি করতে শুরু করেছেন তাঁরা। পুরোদমে কুমড়া তোলা শুরু হয়েছে। এসব কুমড়া ট্রাকভর্তি হয়ে যাচ্ছে ঢাকা , খুলনা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম সহ নানা শহরে।
চরের কৃষক রফিকুল বলেন, চরে এবার অন্তত দুই হাজার বিঘা জমিতে কুমড়া চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অথচ বিক্রি হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। মাত্র তিন মাসের এই সবজি চাষের প্রতি তাই সবাই ঝুঁকছেন।
কলাচাষি বেজুল বলেন, চরে জেগে ওঠা মাটি বেলে দোআঁশ প্রকৃতির। তাই এখানে কলাচাষ ভালো হয়। তিনি তিন বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছেন। কলা ধরতে শুরু করেছে। আগামী দুই বছর একটানা এখান থেকে কলা পাওয়া যাবে।
বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ছিদ্দিক আলী মিষ্টু বলেন, ১৯৭২ থেকে ৮৪ সাল পর্যন্ত লালপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের , লালপুর, দিয়ার শংকরপুর, নওসারা সুলতানপুর, আরাজি বকনাই, বাকনাই ,সেকেন্দারপুর, চাকলা বিনোদপুর, রসুলপুর, মোহরকয়া , বন্তোবস্তো গোবিন্দপুর সহ অন্তত ১৮টি গ্রাম পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হন। দীর্ঘদিন পর চর জেগে ওঠায় আবার তাঁরা উর্বর ফসলি জমি ফিরে পেয়েছেন। এসব জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে সবার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নদীভাঙনে এই এলাকার অর্থনীতি একসময় ভেঙে পড়েছিল। এখন চর জেগে ওঠায় অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কৃষি বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর চরকেন্দ্রিক কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে। এতে চর এখন সবুজ অর্থনীতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মৌসুমে চর থেকে শুধু কুমড়া বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার।