হামাঘেরে কেউ নাই স্যার হামড়া গরীব-মানুষ! 

0 ৬৬

ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি: সরকারের নিয়মনীতি মেনে বিভিন্ন কাগজপাতি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা করলেও কোনপ্রকার সাহায্য-সহায়তা বঞ্চিত নাসির! অবশেষে মুদি দোকানী নাসিরের পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে! দোকানের আয় হতে চলছিলো তাঁর সংসার! দু’দুইবার ১টি মুদিখানা দোকান হিংসার বসবর্তী হয়ে রাতের অন্ধকারে আগুন লাগিয়ে সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করলেও, এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য-সহায়তা মেলেনি নাসিরের।

এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ হলেও পরে এই অভিযোগকে মামলার পর্যায় ফেলে ভুক্তভোগী নাসির এখন পথে অনাহারে অর্ধাহারে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার নীরব ভুমিকায়। দেখার যেনো কেহই নেই।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার নং দলদলী ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের মৃত সাইদ ওরফে গুদর মন্ডলের ছেলে মোঃ নাসির উদ্দিন। সে ১টি মুদিখানা দোকান করে দিব্বী সংসারের মা, স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে চলছিলো। এরই মধ্যে নাসিরের সংসার জীবনে নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়।

বাড়ীর পার্শ্ববর্তী মোঃ টফিক ও মোঃ দেলোওয়ার নাসিরের ঐ মুদি দোকানটি দু’দুবার পূর্ব শত্রুতাবসত: আক্রোসমূলকভাবে আগুন লাগিয়ে সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করেছিলো। আগুন লাগার দু’মাস অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারের অবজ্ঞা আর অবহেলায় দোকান মালিক নাসিরের পরিবারটি এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে বা ইউনিয়ন পরিষদ হতে কোনপ্রকার সাহায্য-সহানূভুতি পায়নি।

বর্তমানে নাসিরের পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে বলে প্রত্যক্ষ করা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর ২০২২ তারিখে এবং এর প্রায় দুইমাস পরে বহু কষ্টে পূনরায় ছোট্ট করে বানানো দোকানটিতে একই কায়দায় গত ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ইং আবারো আগুন লাগিয়ে সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করে টফিক ও দেলোওয়ার।

ঘটনাটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হলেও এমনকি প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পায়নি মুদিদোকান মালিক নাসির। অসহায়-গরীব নাসির এ প্রতিবেদককে জানায়, আমার বহু কষ্টে গড়া একটি মুদিখানা দোকান করে বেশ ভালভাবেই চলে যাচ্ছিল আমার সংসার। কিন্তুু আমার পার্শ্ববর্তী মৃত কয়েশ উদ্দিনের ছেলে টফিক (৪৭) ও মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে মোঃ দেলোওয়ার (৩৬) এরা দু’জনে পূর্বশত্রুতা আর হিংসার বসবর্তী হয়ে এনিয়ে দু’দুইবার আমার দোকানটি আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ ভস্মিভূত করে। আমার দোকানে আগুন লাগিয়ে ক্ষয়ক্ষতির আগের পরিমাণ ছিলো-প্রায় ১লাখ ৫০হাজার ও পরের ক্ষতির পরিমান ছিলো প্রায় ৫০হাজার টাকা।

এনজিও আশা হতে ঋণ নিয়ে দোকান চালিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলাম। আমি সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলেও অদ্যাবধি কোনপ্রকার সুরাহা তথা সরকারী কোন সাহায্য-সহায়তা পায়নি। আর হামাঘেরে কেউ নাই স্যার ! হামড়া গরীব-অসহায়! এখন সভাই তেলীর মাথায় তেল ঢালে স্যার! বলেই কেঁদে ফেললেন নাসির।

নাসির জানায়, এ ব্যাপারে ভোলাহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করলে তাঁরা দু’জনেই (টফিক ও দেলোওয়ার) পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল-হাজতে গেলেও স্থানীয় জামাতের নেতাদের তদবীরে তাঁরা দু’জন জামিনে বাড়ীতে এসে নাসিরের সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ নানা দুর্ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। হামি সবার কথাশুইনা চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে যাইয়্যাও কোন লাভ হইনোখো।

হাঁর গাঁয়ের কাকা-খালুরা কহিলে থানা-পুলিশের কাছে গিয়াছি অভিযোগ করেও ফায়দা হয়নিখো। চেয়ারম্যান-মেম্বার আর থানা-পুলিশেরা আজকাল পরশু কইরা হামি ধন্ন্যা দিতে দিতে হালাক্কান হয়েছি, হামার লাভ হয়নিখো। দু’দুমাস নয় বর্তমান ৮/৯ মাস পার হয়্যা গেলেও এক পাইশার উপকার পায়নিখো বলে আবারো কেঁদে ফেললেন, নাসির।

ভুক্তভোগী নাসিরের স্থানীয়রা ঘটনাটির ব্যাপারে জানলেও তাঁদের কাছে কোনো প্রতিকারের হাত নেই বলে জানান তাঁরা। এ ঘটনায় জড়িত টফি ও দেলোওয়ার জামাতপন্থী হওয়ায় কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না বললেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা। ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় আরসাদ আমিন বলেন, আমরা গ্রামবাসী সকলে মিলেমিশে প্রথমবার দোকানটি আগুনে পুড়িয়ে দিলে, গ্রামের সকলেই চাঁদা আর বাড়ী বাড়ী চাল-ধান তুলে নাসিরের দোকানটি পুনরায় চালু করি।

কিন্তু দোকান মালিক নাসিরের কপালে খারাপি আছে, পূর্বের কায়দা-কৌশলেই ফেরও ঐ টফিক ও দেলোওয়ার দোকানটি পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। অথচ এর আগে আগুনে পুড়া দোকানটির কোনো প্রকার সুরাহা হতে না হতেই দ্বিতীয়বার মত আগুন লাগিয়ে পোড়ানো হয় দোকানটি।

এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে সাবেক ভোলাহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ কাউসারুল আলম সরকারের সাথে যোগাযোগে জানান, এ ঘটনায় সুরাহার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানই যথেষ্ট। ইউনিয়ন পরিষদে এ বিষয় সংক্রান্ত কাগজাদি রয়েছে, যা যথাযথভাবে পূরণ করে আমাদের কাছে পাঠালে যথোপযুক্ত নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।ভোলাহাট থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ সেলিম রেজা

এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থ্য নাসিরের দুইবার দোকান পুড়িয়ে ভস্মিভূত করার ব্যাপারে জানতে চাইলে, সংশ্লিষ্ট ৩নং দলদলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ মোজাম্মেল হক চুটু বার বার একই কথার জবাব দেন এবং বলেন, আমি নিয়মানুযায়ী যা যা করা দরকার আছে, সে অনুযায়ী কাগজাদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা করেছি, সময় সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা হবে বলে তিনি বিষয়টি বার বারই এরিয়ে যাবার চেষ্টা করেন।

এ ব্যাপারে সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোঃ কাউসারুল আলম সরকার আরো বলেন, এ সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা সংশ্লিাষ্ট কর্মকর্তাদের জেলা অফিসে অনুপস্থিত এবং অতিরিক্তি দায়িত্ব পালনে নানা জটিলতার কারণে উপজেলার দাবীর আর্জিগুলি যথোপযুক্ত সময়ে অনুমোদন হয়ে না আসার কারণে ভূক্তভোগীদের নানা হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। জেলার কর্মকর্তাগণ আমাদের পাঠানো কাগজাদি যথাসময়ে ছেড়ে দিলে আমরাও ভূক্তভোগীদের তাদের প্রাপ্ত অনুদান দিয়ে তাদেরকে শান্ত করতে পারতাম। এতে ক্ষতিগ্রস্থ্যরা খুশি আর আমরাও এতে পরিতৃপ্তি পেতাম বলে জানান।

বর্তমান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ হাবিবুর রহমান এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনার পরে ঐ তারিখে যথাযথভাবে কাগজপত্র জেলা অফিসে পাঠানো হয়ে থাকলে, অবশ্যই ভুক্তভোগীকে ডেকে তার প্রাপ্প প্রদাণ করা হবে বলে তিনি জানান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.