পান্ডার গায়ের রং কেন সাদা-কালো
পান্ডা প্রাণীটির রোমশ শরীরজুড়ে সাদা-কালো নকশা। কিন্তু এদের লোমের আস্তরণ তো রঙিনও হতে পারত! কেন হয়নি—সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন একদল মার্কিন গবেষক। ফলাফল এ উদ্ভাবন: পান্ডাদের গায়ের সাদা-কালো নকশার দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে—ছদ্মবেশ এবং যোগাযোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার জীববিদ্যার অধ্যাপক টিম ক্যারো বলেন, জায়ান্ট পান্ডার শরীরের রঙের ব্যাপারটি জীববিদ্যার একটি বহু পুরোনো রহস্য। সম্ভবত এ রকম দেখতে স্তন্যপায়ী প্রাণী দ্বিতীয়টি নেই।
ওই গবেষকেরা পান্ডার শরীরের বিভিন্ন অংশের লোমের সঙ্গে অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর লোমের তুলনা করে দেখেন। পরিবেশগত ও আচরণগত ব্যবধানের গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো চিহ্নিত করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। তাঁরা দেখেছেন, পান্ডার মুখমণ্ডল, ঘাড়, পেট ও পিঠের সাদা অংশগুলো একে তুষারের মধ্যে গা ঢাকা দিতে সাহায্য করে। আর কালো রঙের হাত-পায়ের সাহায্যে তৃণভোজী প্রাণীটি ছায়াচ্ছন্ন স্থানেও লুকিয়ে থাকতে পারে। এ গবেষণা প্রতিবেদন বিহেভিয়ারাল ইকোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক দলটির অনুমান, চামড়ার রঙে আলো-আঁধারির এই ভারসাম্যের কারণে পান্ডারা তুষার ও ছায়াঘেরা স্থানে লুকিয়ে থাকতে পারে। আর তাদের গায়ের রঙে এ বৈচিত্র্যের অভাবের কারণ হতে পারে খাদ্যাভ্যাসের বৈচিত্র্যহীনতা। কারণ, পান্ডার মূল খাদ্য বাঁশে পুষ্টিকর উপাদান ও ক্যালরি খুব বেশি নেই। সারা বছরই এদের খাওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ কারণে সব সময়ই নিরাপত্তার জন্য নিজেকে আড়াল করার প্রয়োজন পড়ে। অন্য অনেক বন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন: ভালুকেরা শরীরে শক্তি জমিয়ে রাখতে পারে। পুরো শীতকালটা অবলীলায় ঘুমিয়ে পার করে দিতে পারে।
পান্ডার সাদা-কালো রং শুধুই যে নিজেকে লুকোনোর কাজে লাগে, তা নয়। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ভালুকের কালো রঙের কান এবং চোখের ওপরের আবরণ প্রাণীটির হিংস্রতা ও আগ্রাসী আচরণের সংকেত দেয়। তাই দেখে সম্ভাব্য শিকারি ও প্রতিযোগী প্রাণীরা উভয়েই সতর্ক হওয়ার সুযোগ পায়। পান্ডাদের ক্ষেত্রেও এ রকম কোনো ব্যাপার থাকতে পারে।
লংবিচে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টেড স্ট্যানকোউইচ বলেন, তাঁরা পান্ডার শরীরের অন্তত ১০টি অংশের অনেক ছবি নিয়ে কাজ করেছেন। সেগুলোতে ২০টির বেশি রং বসিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এটা সাংঘাতিক পরিশ্রমের কাজ ছিল। তাঁর মন্তব্য: পান্ডা কেন সাদা-কালো—এমন আপাত-সহজ প্রশ্নের জবাব খুঁজতেও শত শত ঘণ্টার শ্রম দরকার হতে পারে।